রূপকথার ভালোবাসায় ভালো বাসা

মরীচিকা, মরীচিকা; এই আছে তো এই নাই। একটু আগে যেটা বাস্তব মনে হয়েছিল সেটা কিছু পরে হদিস বিহীন হয়ে যেতে পারে। তা সত্ত্বেও অদ্ভুত প্রাণী এই মানুষ দুই মিনিটের ‘নাই ভরসা’ জানার পরও কত না স্বপ্ন দেখে। ক্ষেত্র বিশেষে প্রচুর স্বপ্ন বাস্তবায়নও করে ফেলে। তার পরে অর্জনের আনন্দে মাতোয়ারা হয়। কিন্তু তার উপভোগের সময়কাল একেবারেই সামান্য। আবার মানুষ স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করতে পারে বলেই সে নিজেকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে ধরে রাখতে পেরেছে। তবে অনেকের ধারণা সময় গড়ানোর সাথে সাথে মানুষের স্বপ্ন দেখা কমতে থাকে। কিন্তু ‘যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ”। তাই আমার মতে সবারই পুরোটা জীবন ধরেই স্বপ্ন দেখার সাহস থাকাটা বাঞ্ছনীয়।

কিছুদিন আগে আমি ও আমার প্রিয়তমা স্বপ্ন দেখেছিলাম আমাদের রূপকথার মতো মতো ছিমছাম গুছানো একটা মনোরম বাড়ির। আরম্ভ হলো আমাদের স্বপ্ন পূরণের অভিযান। মেলা কাঠ খড় পুড়িয়ে এবং বেশ কিছুটা সময় পার করে মনের মধ্যে যে আবাসের ছবিটা ছিল তার রূপরেখা খুঁজে পেলাম। কিন্তু খুঁজে পেলেই তো হবে না, সেটা গড়তে হলে অর্থনৈতিক প্রশ্নটা সবার আগে চলে আসে। মেলা হিসেব-নিকেশ করে তার একটা সমাধান করলাম। জায়গা নির্ধারণ হলো। তবে নিজের চোখে প্লট দেখে না; কাগজে প্ল্যান দেখে। কারণ পুরো জায়গাটা তখনও গাছ পালায় ভর্তি একটা জঙ্গল।

বিশাল একখণ্ড ভূমিকে মানুষের বসতি হিসেবে গড়ে তুলার জন্য প্রস্তুত করা হলো। পাকা রাস্তার সাথে সাথে পানি, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেটসহ অন্যান্য লাইন বসানো শেষ হলেই এই দেশে প্লট বিভক্ত করা হয়। তার পর বাড়ির প্ল্যান পাশ করানো সহ অন্যান্য অনুমতি পাওয়ার জন্যে অপেক্ষার পালা। কাজগুলো সারতে সারতেই পাক্কা ছয় মাস চলে গেল। তারপরে এক মাহেন্দ্রক্ষণে নির্মাণের কাজ আরম্ভ হলো। শ্রমিকরা মাটি খুঁড়লো ফাউন্ডেশনের জন্যে। এতেই আমাদের উত্তেজনা। টানেলের শেষে মৃদু আলোকচ্ছটা বুঝি ঝিলিক দিয়ে উঠলো। কাজ যখন আরম্ভ হয়েছে, শেষটাও নিশ্চয়ই হবে। ইতিমধ্যে আমরা আগের বাসা বিক্রি করে এক এপার্টমেন্টে এসে উঠেছি। আমাদের রূপকথার বাড়ির কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার পরিকল্পনা। সামান্য কিছু ব্যবহারের জিনিস বাইরে রেখে অন্যান্য সবকিছু বাক্সবন্দী করা হয়েছিল। একবারে নতুন বাসায় যেয়ে নতুন করে সব সাজানোর ইচ্ছা।

মার্কিন দেশে বাঙালির জীবনে টেনশনের একেবারেই কমতি নাই। আজ থেকে বিশ বছর আগে প্রথম বাসার গৃহ প্রবেশের দিনের ঘটনা আমার প্রতিটা মুহূর্তের সাথী হয়ে দাঁড়াল। সেবারও নতুন দেশে একখণ্ড জমি ও বাড়ির মালিক হওয়ার উত্তেজনা ছিল একেবারে আকাশছোঁয়া। কিন্তু প্রথম দিনেই একটা অঘটন ঘটলো। এই দেশে যারা থাকেন তারা “লে-অফ” বিষয়টার সাথে পরিচিত। কথাটার অর্থ হলো চাকরি থেকে বিদায়। এইদেশে কোম্পানিগুলোর মুনাফা বিনিয়োগকারীদের আশা অনুযায়ী করতে না পারলেই প্রথমেই কিছু কর্মচারী ছাঁটাই বা লে অফ করে খরচ কমানোর চেষ্টা করে। যাই হোক ওই আলোচনায় এখন আর না যাই। আমি যেহেতু কাজে-কর্মে মনোযোগী সে জন্যে ধরেই নিয়েছিলাম আমাকে এ ধরণের ধকলের মধ্যে কখনো পড়তে হবে না। তবে আশংকটা কেউই ১০০ ভাগ উড়িয়ে দিতে পারে না। কিন্তু বলে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। যখন মালামাল নিয়ে সদ্য নির্মিত বাসায় ঢুকছি, ঠিক সে রকম সময়ে আমার ডিপার্টমেন্টের ভিপির কল পেলাম। তিনি বললেন, আমি যেই ব্যবসার যে দায়িত্বে ছিলাম, সেটা বিক্রি হয়ে গেছে। আমি কোম্পানির সাথে থাকতে চাইলে আমাকে বদলি নিয়ে অন্য শহরে যেতে হবে নতুবা আমাকে লে-অফ করা হবে। এ রকম শুভ দিনে চাকরি হারানোর জন্য আমি একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। মনুষ্য জীবনে কঠিন পরিস্থিতি কত নিষ্ঠুর রসিকতা করতে পারে, তার একটা প্রমাণ আমাকে হাড়ে হাড়ে টের পেতে হলো।

বাড়ি তৈরির কাজ চলতে লাগলো। ফাউন্ডেশনের পর বাড়ি উপরের দিকে উঠতে আরম্ভ করলো। এই পর্যায়কে বলে ফ্রেমিং। হাজারও কাঠের সাথে কাঠ জোড়া লাগিয়ে দেয়াল হয়। বাংলাদেশের রাজ মিস্ত্রিরা এসব দেখলে হয়তো হায় হায় করে উঠবে। এইসব কাঠ ঝড় বৃষ্টিতে টিকবে তো! নাহ এখানে মার্কিন প্রযুক্তি চৌকস। নির্মাণ শৈলী তাদের খুবই বিজ্ঞান সম্মত ও সাশ্রয়ী। প্রচণ্ড শিলা বৃষ্টি ঝড়ে নির্বিঘ্নে টিকে থাকে। বড় ধরণের টর্নেডো আঘাত না করলে একশ বছর আয়ু অনায়াসে পেয়ে যায়। অবশ্য কিছু কল-কব্জার রক্ষনা-বেক্ষণ নিয়মিতভাবেই করতে হয়। তবে একটা ব্যাপার খুবই লক্ষণীয়। গৃহ নির্মাণের প্রতিটা পর্যায় সম্পন্ন করে সিটি ইন্সপেক্টরের ‘পাশ’ সার্টিফিকেটের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এই ইন্সপেক্টর মান বজায় রাখার ব্যাপারে খুবই সচেতন। তারা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফলাফল দেন। সঠিকভাবে আবাস তৈরি না হলে, মানুষের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে। তার থেকে সিটির ঘাড়ে দোষ আসতে পারে। এইজন্য মাঝে মাঝেই কাজের বিরতি পড়ছিল। আমার চাচ্ছিলাম কাজটা দ্রুত শেষ হউক। কিন্তু তার পরে নিজেদেরকে আশ্বস্ত করছিলাম, দ্রুত শেষ হওয়ার চেয়ে সঠিক এবং শক্তপোক্ত নির্মাণই বেশী জরুরী।

স্বপ্নের ডালা বড় হয়ে চলল। সুযোগ পেলেই কাজের অগ্রগতি দেখে আসি। তবে শনিবার সকাল হলে আমাদের সেখানে যাওয়া চাই। আমাদের স্মার্ট ফোনগুলো বিষয়টা ঠাওর করে ফেলল। না চাইলেও সে দিনটার প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে দিতো। এইটা আমাদের ব্যক্তিজীবনের উপর গোয়েন্দাগিরি হয়ে গেল না? কিন্তু নিজেদের সান্ত্বনা দিলাম, আমাদের মতোই হয়তো যন্ত্রগুলো বাড়িটার কাজ নিয়ে উৎসাহী। এর মধ্যে ছাদ হলো, সিঁড়ি লেগে গেল। রুমগুলো তাদের নিজের আকৃতি পেলো। আমরা প্ল্যানে যেমন দেখেছিলাম, তার সাথে মিলিয়ে বুঝতে চেষ্টা করতাম যে সবকিছু ঠিকঠাক হচ্ছে তো। এমেরিকার এই অঞ্চলে কন্সট্রাকশনের হাড় ভাঙ্গা খাটুনির কাজগুলো সব মেক্সিকো ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে আসা শ্রমিকেরা করে। এদের বেশীর ভাগেরই যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি থাকে না। তারা প্ল্যানের সাথে প্রতিটা বাক, প্রতিটা কোণা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মিলিয়ে করছে। সামান্য এদিক-ওদিক হলেই ঠিক করে নিয়েই পরের কাজে এগুচ্ছে। পরিচিত না হলেও নাম না জানা এইসব খেঁটে খাওয়া মানুষগুলোর জন্যে কৃতজ্ঞতা এমনিতেই চলে আসে।

একবার এক বন্ধু বলেছিল, নির্মীয়মাণ বাড়িতে না-কি ভূত দেখা যায়। একসময় তো ওরা ওখানেই থাকতো। নিজেদের রাজত্ব কেই বা স্বেচ্ছায় ছাড়তে চায়? তারা যতটুকু পারে মানুষদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করার চেষ্টা করে। ব্যক্তিগতভাবে আমি ভূতে একবারেই বিশ্বাসী না। তবে আমার অবচেতন মন সম্ভবত বন্ধুটার কথা পুরোটা উড়িয়ে দিতে পারে নি। বাড়ির কাজ তখন শেষের দিকে। ভিতরে দেয়ালে রঙের কাজ চলছিল। অন্যমনস্ক অবস্থায় সদর দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখলাম দু জন লোক কথা বলছে। তাকিয়ে দেখি তারা অস্বাভাবিক ধরণের লম্বা। বাড়ির উঁচু ছাদে তাদের মাথা প্রায় ছুঁই ছুঁই করছে। মুহূর্তেই বন্ধুটার সেই ভূতের কথা অবচেতন মন স্মরণ করিয়ে দিলো। অবশ্য সাথে সাথেই বুঝতে পারলাম বিষয়টা। রঙের মিস্ত্রিরা দুটো কাটের পায়ের উপর দাঁড়িয়ে কাজ করছে। ওই পা নিয়ে তারা কোনো সমস্যা ছাড়াই হাঁটতে পারে। অনেকটা আমাদের দেশে সার্কাসে এক সময়ে যেমন দেখা যেতো। এরকম দৃশ্য আমার আগে দেখা ছিল না বলে একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে ওদেরকে বললাম তোমারা কে এতো যত্নে ও কলা কুশল প্রয়োগ করে যে আমার বাড়ি বানিয়ে দিচ্ছো সে জন্য ‘মুচো গ্রাসিয়াস’। শব্দটার বাংলা করলে হলো অশেষ ধন্যবাদ। মাথায় একটা চিন্তা এলো, যারা গায়ে গতরে খেঁটে বাড়ি বানায়, তাদের কিন্তু সেই বাড়িতে থাকা হয় না। মালিক হওয়া তো পরের ব্যাপার।

নতুন গৃহে প্রবেশ নিয়ে এইবার একটা গল্প বলি। এক দম্পতি বাড়িতে ঢুকার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিশাল এক ফুলের তোড়া পেলো। সাথের কার্ডে লেখা, “শান্তিতে বিশ্রাম করো” (Rest in Peace)। স্বামী ভদ্রলোক মহা বিরক্ত হয়ে ফুলের দোকানের মালিককে এই কার্ড পাঠানর জন্যে তুমুল গালাগালি করলেন। অন্যদিক থেকে দোকানের মালিক উত্তর দিলো, “আপনার থেকে আরেক পক্ষ নিশ্চয়ই আরও বেশী ক্ষেপে আছেন। তারা তাদের এক প্রিয় মানুষকে কবর দিচ্ছেন। সেখানকার কার্ডে লেখা আছে, “নতুন বাড়ির জন্য অভিনন্দন” (Congratulations on your new home)। আসলে আপনাদের দু পক্ষের কার্ড অসাবধানতাবশত বদলা-বদলি হয়ে গেছে।” শুভেচ্ছা কার্ডে যাই লেখা থাকুক না কেনো একটা বাড়ি মানুষের জীবনে কত-ভাবেই না জড়িয়ে থাকে। সন্তান প্রতিপালন, বিশ্রাম, খাদ্য গ্রহণ থেকে আরম্ভ করে কত হাজার কাজ-ই না এই আশ্রয়ে হয়। হিন্দি ভাষায় একটা কথা আছে, “ঘার এক মান্দির”। জন্ম থেকে আরম্ভ করে মৃত্যু পর্যন্ত হাজারো দায়িত্ব-কর্তব্য যেখানে সম্পন্ন হয়, সেই স্থান নিঃসন্দেহে মন্দিরের সম্মান পেতে পারে।

আরেকটা ঘটনা বলি। বাড়ির কাজ শেষ হওয়ার তখন মাস খানেক বাকী। আমার বর্তমান চাকরীস্থলে বেশ কিছু কর্মচারী লে-অফ করা হলো। কারণ হিসেবে দেখালো গত কোয়াটারে কোম্পানির স্টকের দাম বেশ কমে গেছে। সে জন্য ম্যানেজমেন্ট কর্মচারী ছাঁটাই করছে। কাজটা সাধারণত একবারে করে না; দফায় দফায় করে। আমার পরিচিত কয়েকজন চাকরি হারালো। এইদিকে আমার আরম্ভ হয়ে গেল টেনশন। কারণ চাকরি না থাকলে বাড়ি কেনা যাবে না। আবার এতো অল্প সময়ের মধ্যে নতুন চাকরি যোগাড় করা প্রায় অসম্ভব। অন্যদিকে আগের আবাস বিক্রি করে দিয়েছি বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে। টেম্পোরারি আবাস এপার্টমেন্টের লিস (Lease) শেষ হয়ে আসছে। কোনো একটা অঘটন হয়ে গেলে বড় একটা ঝামেলার আশংকা। গতবারের গৃহ প্রবেশ কালে যেই অঘটন হয়েছিল সেটা না আবার পুনরাবৃত্তি হয়! কিন্তু তখন বাড়ি কেনার প্রক্রিয়া সমাপ্ত হওয়ার পরেই হয়েছিল। সে জন্যে চাকরি হারানোর পর কিছু ভোগান্তি হলেও বাড়ির মালিকানা তো পেয়েছিলাম। এইবার তা হলে কি হতে যাচ্ছে? নাহ, শেষ পর্যন্ত বিশাল এক সমস্যা থেকে বেঁচে গেলাম। মনে হলো ঠিক কানের পাশ থেকে কামানের গোলা চলে গেল।

বাংলাদেশের তুলনায় এখানে বাড়ি নির্মাণ বেশ তাড়াতাড়ি সম্পন্ন হয়। ফাউন্ডেশনের মাটি কাঁটা থেকে বিল্ডিঙের বাইরে ল্যান্ডস্কেপ, ফুলের বাগান পর্যন্ত ছয় মাসের মধ্যেই হয়ে যায়। চোখের সামনে ধীরে ধীরে ফাউন্ডেশনের পর দেয়াল, ছাদ, জানালা-দরজা লাগলো। আমাদের পছন্দ করা সব রং দিয়ে রাঙিয়ে বাড়িটা আমাদের কাছে হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত করা হলো। চোখের সামনে নিজের বাড়ির নির্মাণের প্রতিটা ধাপ প্রত্যক্ষ করা বিশাল এক স্মৃতিময় অভিজ্ঞতা। অনেকের কাছে অতিরঞ্জন মনে হলেও আমার কাছে বিষয়টা একটা শিশু জন্ম থেকে বেড়ে উঠার সাথে খুব মিলে যায়। আমার প্রতিটা সন্তানের ধীরে ধীরে বেড়ে উঠার মুহূর্তগুলো আমার মনে দারুণ মধুর-ভাবে গেঁথে আছে। অনেকটা সে রকমভাবেই যুক্ত হয়ে গেল স্বপ্নের রূপকথার বাসাটার নির্মাণের স্মৃতি।

মাত্র কয়েকদিন আগের কথা। আকাশে বিশাল বড় একটা পূর্ণিমার চাঁদ উঠলো। মায়াবী আলোর ঝলকানি রাতের অন্ধকারের সাথে মিশে কেমন এক পাগল করা পরিবেশ তৈরি করলো। দু তলার জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে সৃষ্টিকর্তার অপার সৃষ্টি অনুভব করতে থাকলাম। পুরো বাড়ি জুড়ে আছে বড় বড় জানালা। এই সব জানালাগুলো দিয়ে সূর্যের আলো বাড়ির ভিতরে ঢুকে লুটোপুটি পায়। আবার বৃষ্টি হলে বাইরে তাকিয়ে চোখ ও হৃদয় ভরিয়ে ফেলা যায়। তবে আমার কাছে বাড়ির সবচেয়ে বড় উৎসাহ ও আকর্ষণের স্থানটা হলো ‘লেখকের রুম’। এখানে লেখা-লেখি করার সব সরঞ্জাম জড়ো করে দারুণ আকর্ষণীয় করে সাজানো হয়েছে। রুমটা পুরো বাড়ি থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন। সেখানে ডেস্ক, কম্পিউটার, বইয়ের শেল্ফের সাথে আছে অদ্ভুত সুন্দর নীরবতা। আমার এক মনে ভাবা ও লেখার জন্যে এগুলো খুবই দরকারি। আমাকে এ রকম সুন্দর একটা রুম উপহার দেবার জন্যে আমার প্রিয়তমা স্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা।

“পরের জায়গা পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই। আমি তো এই ঘরের মালিক নই।” পবিত্র কুরান শরীফে সুরা বাকারায় বলা হচ্ছে (২: ২৮৪), বেহেশত ও পৃথিবীর মধ্যে যা যা আছে তার সব কিছুর-ই মালিক পরম করুণাময় আল্লাহ তা’ আলা। তিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি তো অবশ্যই তার মালিক। আমরা তার অসীম ভাণ্ডারের সামান্য এক অংশের ভোগ ও রক্ষণাবেক্ষণের সুযোগ পাই। আমার এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বাড়ির মালিকানাকে আমি দেখি আমার উপর অর্পিত একটা দায়িত্ব হিসেবে। আমার লক্ষ্য হচ্ছে আমার এই স্বপ্নের রূপকথার আবাসের সংস্পর্শে যারা আসবে তারা যাতে সবাই একটা সুন্দর ভালো লাগার অনুভূতি সাথে নিয়ে যেতে পারে।

এইবার আপনাদের বলি, আমার আগের ও এখানকার বাসার মধ্যে পার্থক্য। আমার আগের বাসায় পুরোপুরি গৃহকর্ত্রীর শাসন ছিল। আর নতুন বাসায়? নাহ, সেখানেও কোনো ব্যতিক্রম হয় নি। তবে মনে হচ্ছে গৃহকর্ত্রীর শাসনের মাত্রা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। বাড়ির সৌন্দর্য রক্ষণ ও বর্ধনের জন্য কখন কি করতে হবে, তার ফিরিস্তি বেড়েই চলেছে। আমি জানি নতুন বাড়ি নিয়ে তার স্বপ্ন আমারটার থেকেও মেলা বড় ছিল। তারপরেও আমাদের যৌথ একটা স্বপ্ন যে বাস্তবায়ন হয়েছে, তাতেই আমি মহা খুশি। তা ছাড়া যেই বাড়ির রমণী সন্তুষ্ট, সেই বাড়িতে সব কিছুই আনন্দের হয় বলে আমি জানি।

এপ্রিল ২৫, ২০১৯

কাজী হাসান

লেখক: quazih@yahoo.com