black concrete road surrounded by trees during daytime

টেক্সাস ফার্ম রোড 

বৃষ্টি পছন্দ করে না এমন বাঙালি খুঁজে বের করাটা বেশ কঠিন। 

বৃষ্টিতে ভোগান্তি কি আর কম হয়? জায়গায় জায়গায় প্যাচ প্যাচে কাঁদা। সাথে পিছলা। ঘর থেকে বের হয়ে কাজেকর্মে যেতে কসরতের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। ঢাকা শহর হলে একেবারে রক্ষা নাই। খারাপ ট্রাফিক জ্যাম একেবারে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। উত্তরা থেকে মহাখালী যেতে তিন ঘণ্টায় জায়গায় কমপক্ষে চার ঘণ্টা লেগে যায়। শান্তিনগরের আশে পাশে বাড়ি হলে একেবারে কথাই নাই। রাস্তার মাঝখানে নানা সাইজের ডোবা, পুকুর তৈরি হয়ে যায়। সেখানে পা পড়লে হাড্ডি ভেঙে যাবার সমূহ সম্ভাবনা। আর রিকশার চাকা সেই পানি ভর্তি গর্তে পড়লে যাত্রীকে ছিটকে রাস্তায় যেয়ে পড়তে হয়। গ্রামের দরিদ্র বাঙালিদের এর থেকে রেহাই নাই। ছাদে ছিদ্র থাকলে টিপ টিপ করে পানি এসে পড়ে। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে নদীর পানি এসে গ্রাম ভাসিয়ে দেয়। দুর্দশা কাহাকে বলে? তারপরেও বাঙালি কেন বৃষ্টি পছন্দ করে? বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ বাঙালির আবেগী মনকে নাড়িয়ে দেয়। কি যেন কথাটা বাঙালি মাত্রই কবি। আবেগী মন থাকলে কবি তো হবেই। 

তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। বিকাল চারটাতেই মনে হচ্ছে অন্ধকার নেমে এসেছে। গাড়ির কাঁচ দিয়ে দৃষ্টি মাত্র কয়েক ফুট পর্যন্ত যাচ্ছে। এই অবস্থায় গাড়ি চালানো খুবই বিপদজনক । একটু অসাবধানতায় বড় ধরণের বিপদ হয়ে যেতে পারে। গাড়ি চালাতে হচ্ছে একেবারে ধীর গতিতে। হাইওয়েতে যেখানে গতি সীমা ঘণ্টায় ৭০ মাইল সেখানে গাড়ি চলছে কি-না মাত্র ২০ মাইল স্পিডে। গন্তব্যে পৌঁছাতে আরও বেশী সময় লাগবে। বাড়ি যেয়ে পোশাক পাল্টে একটা পার্টিতে যেতে হবে। অফিসের পার্টি; সেখানে না গেলেই না। প্রথমে শেখরের খুব বিরক্ত লাগছিল। ওয়াইপারের ক্যাচ ক্যাচ শব্দ বিরক্তিটাকে আরও উস্কে দিচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই শেখরের মাথায় বাংলাদেশের বর্ষাকাল নিয়ে চিন্তা মাথায় চলে এলো। বিদেশে থাকলে কি হবে, সে তো বাংলাদেশে জন্ম নেয়া ও বেড়ে উঠা একজন খাঁটি বাঙালি। সে কবি হতে না পারে কিন্তু তারু একটা আবেগী মন আছে। মনটা পাখা মেলে উড়ে যেয়ে দেশের বর্ষাকাল দেখতে লাগল। চোখের সামনে ভাসতে লাগল শহর ও গ্রামের বাঙালিদের বর্ষার সময়কার অভিজ্ঞতা। 

শেখরের গাড়ি চালাতে বিরক্ত লাগছে না। চোখটা রাস্তার দিকে থাকলেও মনটা সেই বাংলাদেশের মেঘ হয়ে বুঝি উড়ে বেড়াচ্ছে। দেশে থাকলে না হয় মা 'কে ফোন করে বলতে পারত খিচুড়ি আর মাছ ভাজা হলে কিন্তু দারুণ হতো। কিন্তু এখন সেইটা সম্ভব না। সে আছে এমেরিকার টেক্সাসে। পড়ালেখা শেষ হওয়া মাত্রই চাকরির অফার পেয়ে গেল। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই কোম্পানি গ্রিন কার্ডও করে দিলো। কোম্পানিটার সারা দেশ জুড়ে হোটেল, মোটেল আছে। শেখরকে মাঝে মধ্যে সেগুলো দেখতে যেতে। অফিসের থেকে দেড় শত মাইলের মধ্যে হলে গাড়ি চালিয়ে চলে যায়। এর থেকে বেশি দূর হলে প্লেন ধরতে হয়। আজকে অফিসের সে রকম কাজ করতে যেতে হয়েছিল ওয়েকো নামের একটা শহরে। ডালাস অফিস থেকে দূরত্ব ৯০ মাইল। তাই গাড়ি চালিয়ে চলে এসেছিল। গত রাতেই আবহাওয়ার খবর নিয়েছিল। সেখানে বলেছিল সন্ধ্যার পর ঝড়-বৃষ্টি হবে। শেখরের ধারণা ছিল আবহাওয়া খারাপ হওয়ার আগে বাড়ি ফিরে আসতে পারবে। কিন্তু আবহাওয়া-বিদের ভবিষ্যৎবাণী সময়ের আগেই ফলা আরম্ভ করল। প্ল্যান মোতাবেক ফিরতে পারল না। প্রথমে মেজাজটা খারাপ হলেও এখন নিজেকে উৎফুল্ল মনে হচ্ছে। কারণটা আগেই বলেছি, শেখরের শরীর বিদেশ-বিভুয়ে থাকলেও মনটা এখন বাংলাদেশে। প্রবাসী মাত্রই জানে মনটা যখন বাংলাদেশে চলে যায় তখন জীবন যতই প্রতিকূল হউক না কেন, ভিতরের আনন্দের লুকনো ফোয়ারাটা সচল হয়ে উঠে। 

ওয়েকো থেকে ফেরার সময়ে ওয়েস্ট নামে একটা শহর পড়ে। ওখানকার কাছাকাছি আসতেই দেখল ফ্রি ওয়ে শাট ডাউন করেছে। পুলিশের গাড়ি, এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার ট্রাক শেখরকে পাস কাটিয়ে চলে গেল। রাস্তা বন্ধ করে দেওয়াতে জ্যাম বড় হতে লাগল। মিনিট পনেরো দেখল কেয়ার ফ্লাইটের হেলিকপ্টার এসেছে। তার মানে বড় ধরণের এক্সিডেন্ট। কয়েকটা গাড়ি হয়তো একটাকে আরেকটা পেছন থেকে লাগিয়ে দিয়েছে। ফ্রি ওয়েতে এ রকম দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। যেই স্পিডে গাড়ি চলে যে সামনের গাড়ি কোনো কারণে থেমে গেলে পিছনের গাড়িগুলোর সময়মতো থামাটা মুশকিল হয়ে যায়। শেখরের মাথায় এলো না এই বৃষ্টিতে এতো ধীরে গাড়ি চালানোর পরও কেমন করে দুর্ঘটনা হতে পারে। হয়তো কিছুক্ষণ আগে এইদিকে বৃষ্টি ছিল না। গাড়ি চালকরা বৃষ্টি নামার আগে গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে হয়তো অত্যধিক স্পিডিঙ করছিল। কিংবা এমনও হতে পারে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি রাস্তার পাশে খাদে পড়েছে। প্রায় আধা ঘটনা পর জ্যামে আটকানো গাড়িগুলো নড়া আরম্ভ করলো। পুলিশ গাড়িগুলো ফ্রি ওয়ে থেকে বের করে ছোট রাস্তা মানে ফার্ম রোডে পাঠিয়ে দিচ্ছে। তার মানে এখন গ্রাম্য রাস্তা ধরে চলতে হবে। শেখর ফ্রি ওয়ে থেকে বের হয়ে ডান দিকে টার্ন নিলো। 

এতক্ষণ জিপিএস অন ছিল না। একই ফ্রি ওয়ে ধরে সে মেলাবার যাওয়া আসা করেছে। কিভাবে বাড়ি পৌঁছাতে সেটা ভালো করেই জানা। কিন্তু গ্রাম্য পথ কোনটা কোন দিকে গেছে সেটা একেবারেই জানা ছিল না। এখন জিপিএস নির্দেশনা মোতাবেক চলতে হবে। সমস্যাটা হচ্ছে মাঝে মধ্যে সিগন্যাল হারাচ্ছে। তখন অনেকটা আন্দাজের উপর ভর করে এগিয়ে চলতে হচ্ছে। এইদিকে বৃষ্টি কিছুটা কমে আসাতে দৃষ্টি বেশ অনেক দূর পর্যন্ত এগুতে পারছে। গ্রাম্য রাস্তায় গতি সীমা অনেক কম থাকে। বিকেল পার হয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। চারিদিকে ধু ধু প্রান্তর। যতটুকু চোখ যায় সব ভুট্টা ক্ষেত। বলা যাচ্ছে না বাড়ি পৌঁছতে কত সময় লাগতে পারে। জিপিএস সিগন্যাল না পাওয়ায় স্ক্রিনে একটি চাকতি ক্রমাগত ঘুরে চলেছে। তার মানে অসহায় যন্ত্রটা চেষ্টা করেই যাচ্ছে। তার নিজের থেকে কাজ বন্ধ করে দেয়ার কোনো ক্ষমতা নাই। মানুষ হলে না হয় একটি বিরতি নিয়ে আবার চেষ্টা করতো। এইদিনে শেখরের মন বাংলাদেশের বর্ষাকালের সাথে এমেরিকার অবিরাম ঝড় বৃষ্টির সাথে তুলনা করে চলল। 

শেখরের মনে হলো একটা মেয়ে বৃষ্টির মধ্যে একা একা হেঁটে যাচ্ছে। লম্বা চুল ও দেহের আকৃতি দেখে সে রকমটাই মনে হলো। মাথায় ছাতা নাই কিংবা রেন কোটও পরা নাই। আরেকটু কাছে যেয়ে দেখল মেয়েটার কাঁধে ব্যাক প্যাক ঝুলান। তার অর্থ হলো সম্ভবত সে একজন স্কুল ছাত্রী। এ রকম জন-মানবহীন জায়গায় এতো বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাচ্ছে? শেখর এবার নিজেকে নিজে উত্তর দিলো। নিশ্চয়ই স্কুল বাস মিস করেছে। গ্রাম অঞ্চলে স্কুলগুলো হয় অনেক দূরে দূরে। কোনো কোনো সময়ে ২০-২৫ মাইলে পথ হয়। মেয়েটা কোনো উপায় না দেখে পায়ে হেঁটে বাড়ির দিকে যাচ্ছে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে শেখরের গাড়ি ঠিক মেয়েটার পাসে যেয়ে পড়লো। সে ব্রেক করে গাড়ি থামাল। প্যাসেঞ্জার সাইডের দরজা খুলে মেয়েটাকে গাড়িতে আসতে বলল।

এমেরিকার হাই স্কুল ও বাংলাদেশের স্কুলের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। দেশে ক্লাস টেন শেষ করার পর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে কলেজ। এমেরিকায় ক্লাসকে বলে গ্রেড। হাই স্কুলে গ্রেড ১২ পর্যন্ত থাকে। তার মানে বলা যায় বাংলাদেশের কলেজের সম পর্যায়ের। ওয়েস্ট শহর থেকে প্রায় ৩০ মাইল দক্ষিণে ছোট্ট শহর লাইপেন। সেখানকার হাই স্কুলটার নাম জন হেনরি হাই স্কুল। আশে পাশের ৩০ মাইল ব্যাসার্ধের ছাত্র ছাত্রীদের এইটাই একমাত্র হাইস্কুল। তবে স্কুল-বাসগুলো পুরোটা জায়গা কভার করে। ছাত্র-ছাত্রীরা বাড়ির কাছে রাস্তার ধারে অপেক্ষা করে। বাস তাদের সেখান থেকে তূলে নিয়ে যায়। আবার স্কুল শেষে একই জায়গায় নামিয়ে দেয়। তবে প্রায়-ই ছাত্র-ছাত্রীদের সকালে স্কুল আরম্ভ হওয়ার আগে কিংবা স্কুল শেষ হওয়ার পরও খেলাধুলা, বিতর্ক, সায়েন্স ক্লাস সহ নানা কর্মসূচীতে অংশহগ্রহন করার জন্যে স্কুলে উপস্থিত থাকতে হয়। এ রকম ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সাহায্য নিতে হয়। অবশ্য কিছ ছাত্র নিজেরাই গাড়ি চালিয়ে আসা যাওয়া করে। 

সেখানকার একাদশ শ্রেণীর ছাত্রীর নাম সিনথিয়া পার্কার। লাইপেন থেকে প্রায় মাইল বিশেক দূরে হেভেন নামে এক গ্রামে তার জন্ম ও বেড়ে উঠা। এমেরিকার গ্রামগুলো ঠিক বাংলাদেশের মতো না। মানুষের বাসাগুলো বেশ ছড়ানো। মাঝে বড় বড় খামার। এক বাসার থেকে আরেক বাসা যেতে হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গাড়ি নিতে হয়। প্রতিটা বাড়িতেই পূর্ণ বয়স্কদের সাধারণত একটি করে ট্রাক থাকে। পিক আপ গাড়িকে এই দেশে ট্রাক বলা হয়। গ্রামবাসীদের একের সাথে অপরের দেখা হয় চার্চে, বাজারে, কিংবা স্থানীয় কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে। এইদিক দিয়ে যারা স্কুলে যায় তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সাথে প্রতিদিন দেখা হয়। আশে পাশের বেশ কিছু গ্রামের কেন্দ্র বিন্দু হয় ছোট ছোট শহর । জনসংখ্যা কম হওয়াতে সবাই সবাইক চিনে। একে অন্যের ভালো মন্দের খবর রাখে। সিনথিয়া সামাজিকতার দিক থেকে ছিল দারুণ পটু। বেশ ছোটবেলা থেকেই সে মিষ্টি হেসে বড়-ছোট সবার থেকে কথা বলতো, খোঁজ-খবর জানতে চাইতো। এলাকার মেয়রের বিষয়টা চোখ এড়ায় নি। তিনি একবার মজা করে সিনথিয়াকে বলেছিলেন, “তুমি দেখি আমার থেকে বেশি জনপ্রিয়। মনে হচ্ছে তুমিই এখানকার ভবিষ্যৎ মেয়র।” 

সিনথিয়া হাই স্কুলে আসার পর আরও বেশী বিখ্যাত হয়ে পড়ল। এর মধ্যে সে বয়সে বড় হয়েছে। দেখতে দেখতে অপরূপা সুন্দরী নারী হয়ে উঠেছে। লম্বা ছিম ছিমে শরীর, সোনালী চুল, টানা টানা চোখ, ফোলা পুরু ঠোঁট যে কোনো ছেলের হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট। এইদিকে সে স্কুলে ভলিবল টিমে খেলে, নাটকের দলে সক্রিয় সদস্য। খেলতে কিংবা অভিনয় করার জন্যে দলের সাথে বেশ দূর-দূরান্তে যায়। তার জনপ্রিয়তা দিনে দিনে আরও বিস্তৃত হতে লাগল। ফলে ছেলেদের মধ্যে অনেকটা প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়ে গেল, কে প্রথম তার বিশেষ দৃষ্টি কেড়ে নিতে পারবে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে এই বয়সে ছেলে-মেয়েদের বয় ফ্রেন্ড কিংবা গার্ল ফ্রেন্ড থাকাটা খুবই সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু সে ঠিক করল এখনই কোনো সম্পর্কে জড়াবে না। তার লক্ষ্য জীবনের অনেক দূর এগুনো। হাই স্কুল শেষ করে এমেরিকার সেরা কোনো ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার। 

নিয়মিত ভাবে কেউ না কেউ প্রেমের অর্ঘ্য নিবেদন করছিল। সিনথিয়ার সেই একই কথা। প্রেম্র পিছনে এখন সে সময় দিতে চায় না। তার বড় স্বপ্ন দেখাকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেকেই ভালো চোখে দেখে নি। কয়েকজন আবার সাবধানও করেছে, বেশী আশা করলে কষ্টও বেশ পেতে হয়। সে যেন বাস্তব সম্মত চিন্তা ভাবনা করে। শেষে এ কূল আর ওই কূল দুই-ই হারাবে। কথাগুলো যে তাকে কিছুটা হলেও বিচলিত করতো না সেটা বলা যাবে না। আর যাই হোক বয়সের একটা প্রভাব থাকে। তা ছাড়া সম বয়স্করা প্রতি উইক-এন্ডে পার্টি করছে, আনন্দ করছে সেখানে কতক্ষণ দূরে সরে থাকা যায়। এ রকম পরিস্থিতিতে পরিচয় হলো জনের সাথে। একই ক্লাসের তবে অন্য স্কুল থেক বদলি হয়ে এসেছে। আগে সে থাকতো দেশের রাজধানী ওয়াশিংটনে। সেখানকার এক নামজাদা স্কুলে পড়তো। বাব-মা'র ডিভোর্সের হওয়ার পর কেউ তাকে রাখার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল না। সে জন্য আর কোনো উপায় না পেয়ে সে লাইপেন শহরের ১০ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত নানা বাড়িতে চলে এসেছে। 

জনকে বছরের মধ্যখানে আসার জন্যে বেশ চ্যালেঞ্জের মধ্যেই পড়তে হয়েছিল। একই ক্লাস হলেও দেশের দুই প্রান্তের দুই স্কুলের শিক্ষা দেয়ার ধরণ ও সিলেবাসের কিছু পার্থক্য ছিল। অবশ্য জনকে নিজেকে নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে বেশি বেগ পেতে হলো না। শুধু ক্লাসের পড়ালেখাই না স্কুলের ফুটবল দলে নিজের স্থান করে নিলো। কয়েকটা গেম খেলার পর চারিদিকে জনের নাম ছড়িয়ে পড়ল। ছেলে দারুণ কোয়ার্টার ব্যাক। সে আসার পর দল জন হেনরি হাই স্কুল ফুটবল টিম পুরো এলাকার প্রতিপক্ষ হাই স্কুল দলগুলোকে হারাল। যারা স্কুলের ফুটবল দলে খেলে মেয়েরা তাদেরকে এমনিতেই বেশি পছন্দ। তারপরে ভালো খেলোয়াড় হলে তো কথাই নাই। উঠতি মেয়েদের জনের প্রতি আগ্রহ দেখে অন্য ছেলেরা রীতিমত ঈর্ষান্বিত হওয়া আরম্ভ করল। সিনথিয়া শুনতে না চাইলেও জনের নানা গুণাগুণ নিয়মিত কানে আসছিল। প্রথম দিকে বিষয়টা নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখায় নি। পরে একটু খেয়াল করে দেখল, না ছেলেটা অন্যদের থেক বেশ ভিন্ন। মজার মজার কথা বলতে বল আর জোরে হো হো করে হাসার দিক থেকে ওস্তাদ। ক্লাসে বান্ধবী মেরি একবার কানে কানে এসে বলল, “তোর সাথে জনের খুব মিল। এই পর্যন্ত ডজন খানেক মেয়েকে 'না' বলেছে। আর তুই মনে হয় শ খানেক ছেলেকে হতাশার সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিস।” 

মানুষের মন আকাশের মেঘের থেকেও বিচিত্র। যে দু জন ঠিক করেছিল ওরা আপাতত প্রেমের জালে জড়াবে না, তারাই একে অপরের সঙ্গী হয়ে গেল। সিনথিয়া আবিষ্কার করলো জনের হৈ চৈ আর উচ্চ হাসির ফাঁকে শহর ছেড়ে আসা এবং বাবা-মা'র থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার প্রচণ্ড শূন্যতার হাহাকারে ভুগছে। অন্যদিকে সিনথিয়া যতই লক্ষ্যের ব্যাপারে মনোযোগী হউক না কেন, তার ভিতরেও ঠিক নরম কোমল ভালোবাসার হ্রদ ছিল। দু জন খুব কাছাকাছি চলে এলো। ক্লাস একসাথে এবং প্রজেক্টের ও পড়ালেখার সব কাজ একসাথে চলতে লাগল। ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুননও বিশাল হতে থাকল। ওরা ঠিক করল দু জনে রাজধানী ওয়াশিংটন কিংবা ক্যালিফোর্নিয়ায় পড়ালেখা করতে যাবে। সেরা ইউনিভার্সিটিগুলো ওখানেই অবস্থিত। একটাতে না হলে অন্যটাতে এডমিশন হয়েই যাবে। এখন চেষ্টা হলো ভালো রেজাল্ট করে স্কলারশিপ জোগাড় করা। পড়ালেখার খরচ পুরোটা স্কলারশিপে কভার না করলে একজন আরেকজনকে সাহায্য করবে। পার্ট টাইম চাকরি করলে পুষিয়ে যাবে যৌথ খরচপত্র। আন্ডারগ্র্যাড ডিগ্রি হয়ে গেলেই নতুন চাকরি ও নতুন জীবন আরম্ভ করবে।

শেখর দরজা খোলা মাত্রই মেয়েটা গাড়ির সামনের সিটে এসে বসল। শরীরটা ভিজে চপচপ করছে। মেয়েটা ব্যাক-প্যাকটা খুলে পিছনের সিটে রাখল। শেখর কিছু পেপার টাওয়েল এগিয়ে দিলো। সে হাতে নিলো। শেখর মেয়েটার হাতের সামান্য ছোঁয়া পেল। ভীষণ ঠাণ্ডা। মানুষের হাত এরকম ঠাণ্ডা হয় না-কি? হয়তো বৃষ্টিতে অনেকক্ষণ ধরে ভিজেছে; সেই জন্য হয়তো এরকম হয়েছে। একে তো হাসপাতালে ইমারজেন্সিতে নেয়া দরকার। কিন্তু সে তো এ এলাকার না। তার পরে জিপিএস আর মোবাইল ফোন দুটোই কাজ করছে না। মাথায় ঠিক খেলল না কি করা যায়। একটু ভেবে নিয়ে শেখর জানতে চাইলো, “তোমাকে কোথায় নামাতে হবে বলো। আমি সেখানে তোমাকে ড্রপ করবো।” মেয়েটা কোনো উত্তর না দিয়ে পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে দিলো। মেয়েটা বৃষ্টির পানিতে ভেজার কারণে কাগজটা ভিজে যাওয়ার কথা। কিন্তু কি অদ্ভুত কাগজটা একেবারে শুকনো। 

কিছুটা কৌতূহল নিয়ে শেখর মেয়েটার দিকে তাকাল। কিন্তু মেয়েটা একেবারে সোজা তাকিয়ে আছে। নতুন আরোহীর মুখটা স্পষ্ট দেখা গেল না। সে এবার কাগজের দিকে তাকাল। সেটা গুগল ম্যাপের একটা প্রিন্ট আউট। ঠিক এই জায়গা থেকে ১৫ মাইল দূরে হেভেন শহরের একটা ঠিকানায় কিভাবে যেতে হবে সেটা ম্যাপ সহ দেয়া আছে। শেখর আর কোনো কথা না বলার চেষ্টা না করে কাগজের বর্ণনা আর ম্যাপ দেখে গাড়ি চালাতে লাগল। ইদানীংকালে রাস্তায় কাউকে সাহায্য করতে যেয়ে বিপদে পড়েছে এমন ঘটনা বহু শোনা যায়। বিশেষ করে রাস্তা থেকে মহিলাকে উঠিয়ে রাইড (লিফট) দিতে যেয়ে মেলা মানুষের বিপদে হয়েছে। অনেক দুর্বৃত্ত নিরীহ মানুষকে এভাবে ফাঁদে ফেলে মেলা টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে। গাড়ি থামানোর আগে এ রকম কোনো কথা মনে হয় নি। এখন মাথার মধ্যে হাজারও চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। সে এখন মহিলা ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে নি তো? মেয়েটা কি এখন পকেট থেকে পিস্তল বের করবে? না-কি তাকে কোনো ডাকাত দলের আস্তানায় নিয়ে যাবে? মেয়েটা কোনো কথা না বলাতে কিংবা তার দিকে একবারও না তাকানোতে শেখরের মনে সন্দেহের পরিমাণ বাড়তে লাগল। 

এইদিকে সন্ধ্যা পার হয়ে অন্ধকার নেমেছে। শেখর গাড়ির হেড লাইট জ্বেলে দিয়েছে। বৃষ্টি পড়া বন্ধ হয়েছে। বেশ কয়েকবার পাশের আরোহীর পুরো মুখ দেখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনো লাভ হয় নি। সে সোজা রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। আর মুখের সাইডের দিকটা বেশ কিছু চুলে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। এই দেশের মেয়েরা সাধারণত লম্বা চুল রাখে না। কিন্তু পাশের জনের ঠিক বাঙালিদের নারীদের মতো কোমর পর্যন্ত লম্বা চুল; তাও আবার খোলা চুল। তবে কালো না। ব্লণ্ড মানে সোনালী চুল। শেখরের মেয়েদের লম্বা চুলের প্রতি দুর্বলতা আছে। সেই কলেজে থাকতে লম্বা চুলের মেয়েটার প্রেমে পড়েছিল। শুনেছে তার এখন দুই বাচ্চা। ফেসবুকের কল্যাণে ওদের ছবি নিয়মিত দেখে। পাশের বসা বিদেশিনী পুরনো কথা মনে করিয়ে দিলো। আচ্ছা ইদানীং তো বাঙালি ছেলেরা এমেরিকান মেয়েদের বিয়ে করছে। বেশিরভাগই তো ভালো আছে। সেও মনের মতো একটা মেয়ে পেলে কাজটা করতে পারে। মা হয়তো প্রথমে অনুমতি দিবেন না। পরে মিনতি করলে ঠিকই মেনে নিবেন। মেয়েটা যদি একটু কথা বলতো তা হলে হয়তো তা হলে সম্ভাবনার একটা দ্বার উন্মচনের হতে পারত। 

প্রায় ৩০ মিনিট ড্রাইভ করে গন্তব্যে পৌঁছে শেখর গ্রাম্য একটা বাড়ির সামনে গাড়ি থামাল। মেয়েটা দরজা খুলে নেমে পড়ল। শেখর আশা করেছিল মেয়েটার সুন্দর চেহারা সে এবার দেখতে পারবে। সাথে মিষ্টি একটা হাসি ও ধন্যবাদ পাবে। হয়তো বলতে পারে, আসো একটু নেমে এক কাপ কফি খাও ; সামান্য একটু বিশ্রাম নিয়ে যাও। শেখর ঠিক করে রেখেছিল এ রকম প্রস্তাব পেলে সে রাজি হয়ে যাবে। এমেরিকার গ্রামের বাসা এখনও ঢুকে দেখা হয় নি। ভিতরে যেয়ে ওদের জীবনযাত্রার ধরণ বুঝার চেষ্টা করবে। না সে রকম কিছুই হলো না। মেয়েটা হন হন করে হেঁটে চলে গেল। না দিলো একটা থ্যাঙ্কু, না দিলো কোনো মিষ্টি হাসি। শেখরের ভিতর থেকে হতাশার ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো।

সিনথয়া ও জনের প্রেম বেশ কয়েকজন মেনে নিতে পারে নি। ওদের কাছে মনে হয়েছিল জন উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। বড় শহর থেকে বিতাড়িত একজন তাদের অঞ্চলের সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটাকে বাগিয়ে নিয়েছে। তারা সুযোগ খুঁজছিল এর প্রতিশোধ নেয়ার। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্রুদ্ধ ছিল রবার্ট। তাকে সিনথিয়া অনেকবার না করেছে এই বলে যে স্কুল জীবনে প্রেম করে সময় নষ্ট করতে চায় না। সে আগে ইউনিভার্সিটি শেষ করবে। তারপরে এইসব চিন্তা। রবার্ট সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি ছিল। কিন্তু জন এসে তার স্বপ্ন উল্টা পাল্টা করে দিলো । সে নিকট বন্ধুদের জানিয়ে দিলো, সে জনকে সুযোগমত সমুচিত শাস্তি দিবে। 

এইদিকে সিনথিয়া ও জন গ্রেড এগারো শেষ করে বারোতে উঠলো। এই সময়ে ছাত্র-ছাত্রীরা পছন্দমত ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করে ও কয়েক মাসের মধ্যে ফলাফল চলে আসে। তার আগে তাদের কয়েক ধরণের এডমিশন পরীক্ষা দিতে হয়। এই সব পরীক্ষার স্কোর প্রায় সব ইউনিভার্সিটিত ব্যবহার করে। দু জনে কঠোর পরিশ্রম করে এডমিশন পরীক্ষা দিলো। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চেষ্টা করতে লাগল। ওদের ধারণা ছিল ভালো জায়গায় এডমিশন হয়ে যাবে কিন্তু কি পরিমাণ স্কলারশিপ পাবে সেইটা তাদের জানা ছিল না। কারণ তার উপরই নির্ভর করবে ওরা কোথায় পড়তে যাবে। দুরু দুরু বুকে ওরা অপেক্ষা করতে লাগল কবে যে একটা সুখবর আসে। 

গ্রামাঞ্চলে এক বাড়ির থেকে আগের বাড়ির দূরত্ব যেহেতু অনেক থাকে, লোকেরা পোস্ট অফিসে ছোট ছোট বক্স ভাড়া করে যেখানে মেলম্যান চিঠি পত্র ভরে রাখে। এগুলোকে ছোট করে পি ও বক্স (PO Box) বলে। যে যার সুবিধামতো এসে নিজের চিঠিপত্র নিয়ে যায়। সিনথিয়া ও জনের এ রকম একটা করে বক্স ছিল। সেইদিন ছিল ডিসেম্বর মাসের ২৪ তারিখ মানে ক্রিস্টমাসের আগের দিন। সাধারণত দুজনে একসাথে মেল দেখতে আসতো। কিন্তু ওই দিন জন ওর নানাকে বাড়ির বেড়া মেরামতে সাহায্য করছিল। সে সিনথিয়াকে বলল, তুমি নানার ট্রাক (পিক আপ) নিয়ে মেল দেখে আসো। সিনথিয়া একাই পোস্ট অফিসের দিকে রওয়ানা দিলো। 

রবার্টের কাছে খবর গেল আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে সিনথিয়া ও জন বড় শহরে চলে যাবে। নামী ইউনিভার্সিটিতে পড়বে। সে একজন সাধারণ গ্রামবাসী হয়েই থেকে যাবে। রবার্ট ফুসতে থাকলো। পোস্ট অফিসের সামনে জনের নানার ট্রাক দেখে বুঝল ওরা চিঠি দেখতে এসেছে। এইবার সে মরণ ছোবল হানবে।

শেখর পরের দিন দেখল পিছনের সিটে মেয়েটার লাল ব্যাক প্যাক পড়ে আছে। ঠিক করলো উইকেণ্ডে যেয়ে এইটা দিয়ে আসবে। একবার ইচ্ছা করলো এতো ঝামেলার মধ্যে যেয়ে কি লাভ। যেই মেয়ে সামান্য ধন্যবাদ পর্যন্ত দেয় না তার জন্যে আবার নতুন করে এতো কষ্ট করে কি লাভ? না বিবেকে বাধল। হয়তো ওর মধ্যে কোনো মূল্যবান কিংবা দরকারী কিছু থাকতে পারে। কিছু দ্বিধা হলেও ব্যাগটা সে খুলল। হাই স্কুলের কয়েকটা মোটা বই, খাতা, পেন্সিল, কলম। সাইড পকেটে দুটো চিঠি। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে দুটো এডমিশন এক্সেপটেন্স লেটার। দুটোতেই ১০০% স্কলারশিপ অফার। একটা ছেলের নামে অন্যটা একটা মেয়ের নামে। ছেলেটার নাম জন আর মেয়েটার নাম সিনথিয়া। তা হলে সম্ভবত সিনথিয়াকে সে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিল।

 

গুগল ম্যাপের প্রিন্ট আউট দেখে আবার সেই আগের জায়গায় ফিরে এলো। বাড়ির দরজায় এসে কলিং বেলে চাপ দিলো। একজন বয়স্ক মানুষ এসে দরজা খুলে জানতে চাইলেন, “তুমি কি চাও?” শেখর যতটুকু পারল বৃষ্টির রাতের মেয়েটার বর্ণনা দিলো এবং জানাল সে তার ব্যাক প্যাক নিয়ে এসেছে। ভদ্রলোক অবাক হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো। তারপরে বললেন, “এইটা কি করে সম্ভব? আমার মেয়ে সিনথিয়া দু সপ্তাহ আগে ট্রাক এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে। ওর বয় ফ্রেন্ড জনের নানার পুরনো ট্রাক ব্রেক ফেল করেছিল। ট্রাকটা যেয়ে একটা গাছে আঘাত করে। অনেক হাই স্পিডে ছিল। আমার মেয়েটা অন স্পট মারা যায়। আর ট্রাকটা পুরো টোটাল (পরিত্যক্ত) করতে হয়।” 

কেউ জানতে পারে নি ট্রাকটা যখন পোস্ট অফিসের সামনে দাঁড়ান ছিল রবার্ট তখন যন্ত্রটার ব্রেক বিকল করে দেয়।

মারা যাবার পরও সিনথিয়া হয়তো চাইছে, সে নিজে ক্যালিফোর্নিয়ায় পড়ালেখা করতে যেতে না পারলেও, জন যাতে সেখানে যায়। এইজন্য সে শেখরের মাধ্যমে স্কুল ব্যাগটা বাড়িতে পাঠিয়েছে, যাতে জনের চিঠিটা জনের কাছে পৌঁছায়। 

কিন্তু একটা মৃত মানুষ কি করে একটা ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে বৃষ্টির মধ্যে হাঁটতে পারে? 

গুগল প্রিন্ট আউটে একটা তারিখ প্রিন্ট হয়ে আছে। সেইটা আবার শেখর যেদিন সিনথিয়াকে (?) গাড়িতে উঠিয়েছিল সেইদিনের তারিখ। 

সিনথিয়ার বাবার বর্ণনা অনুযায়ী শেখর যেখানে গাড়ি থামিয়েছিল সেটা ছিল সিনথিয়াকে যেখানে কবর দেয়া হয়েছে তার ঠিক সামনে। বৃষ্টির কারণে সে সময়ে সেটা খেয়াল করতে পারে নি। না হলে সে তাকালেই দেখতে পারত সারি সারি কবর। 

কিন্তু সবচেয়ে বয় প্রশ্ন হলো পুরো বিধ্বস্ত ও পরিত্যক্ত গাড়ি থেকে মৃত সিনথিয়া কিভাবে ব্যাক প্যাক বের করল। সেটার ব্যাখ্যা একমাত্র প্রকৃতির কাছেই আছে। 

(একটা বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে) 

(রচনাকালঃ ২০১৯)